Unnoto Pallabi Social Organization

উন্নত পল্লবী সামাজিক সংগঠনে আপনাকে স্বাগতম। আপনি যদি উন্নত পল্লবী সামাজিক সংগঠনের সদস্য হতে চান তাহলে join Us Button এ Click করে আপনার তথ্য দিয়ে আমাদের সাথে Join হন |

Artist Details

প্রাথমিক জীবন

শেখ মোহাম্মদ সুলতান ১০ আগস্ট, ১৯২৩ সালে তৎকালীন  পূর্ব বাংলা, ব্রিটিশ ভারতের (বর্তমান বাংলাদেশ) নড়াইলের মাসিমদিয়া গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তার জন্ম হয়েছিল দরিদ্র কৃষক-পরিবারে। তার মায়ের নাম মোছাম্মদ মেহেরুননেসা। তার বাবা শেখ মোহাম্মদ মেসের আলী পেশায় ছিলেন রাজমিস্ত্রী।তবে কৃষিকাজই ছিল তার বাবার মূল পেশা, পাশাপাশি বাড়তি আয়ের জন্য ঘরামির কাজ করতেন। সুলতান ছিলেন পরিবারের একমাত্র সন্তান। শৈশবে পরিবারের সবাই তাকে লাল মিয়া বলে ডাকতো। বিদ্যালয়ে পড়ানোর মতো সামর্থ্য তার পরিবারের না থাকলেও ১৯২৮ সালে নড়াইলের ভিক্টোরিয়া কলেজিয়েট স্কুলে তাকে ভর্তি করানো হয়।তবে মাত্র পাঁচ বছর অধ্যয়নের পর তিনি সেই বিদ্যালয়ে ছেড়ে বাড়ি ফিরে বাবার সহযোগী হিসেবে রাজমিস্ত্রীর কাজ শুরু করেন। এ সময় বাবার ইমারত তৈরির কাজ সুলতানকে প্রভাবিত করে এবং তিনি রাজমিস্ত্রীর কাজের ফাঁকে আঁকাআঁকি শুরু করেন। সুলতানের বাল্যবয়সের চরিত্র-গঠন সম্পর্কে আহমদ ছফা লিখেছেন: কোনো কোনো মানুষ জন্মায়, জন্মের সীমানা যাদের ধরে রাখতে পারে না। অথচ যাদের সবাইকে ক্ষণজন্মাও বলা যাবে না। এরকম অদ্ভুত প্রকৃতির শিশু অনেক জন্মগ্রহণ করে জগতে, জন্মের বন্ধন ছিন্ন করার জন্য যাদের রয়েছে এক স্বাভাবিক আকুতি। …শেখ মুহাম্মদ সুলতান সে সৌভাগ্যের বরে ভাগ্যবান, আবার সে দুর্ভাগ্যের অভিশাপে অভিশপ্ত।

১০ বছর বয়সে, যখন তিনি বিদ্যালয়ে পড়েন তখন আশুতোষ মুখার্জির ছেলে ড. শাম্যপ্রসাদ মুখার্জি নড়াইলে ভিক্টোরিয়া কলেজিয়েট স্কুল পরিদর্শনে এলে সুলতান তার একটি পেন্সিল স্কেচ আঁকেন। শাম্যপ্রসাদ তার আঁকা স্কেচ দেখে বিশেষভাবে আকৃষ্ট হন এবং এই পেন্সিল স্কেচের মাধ্যমেই শিল্পী হিসেবে সুলতানের প্রথম আত্মপ্রকাশ ঘটে।

খুব ছোটবেলা থেকেই তিনি ছবি আঁকতে পছন্দ করতেন। পাখির বাসা, পাখি, মাছ, গরু-ছাগল, ফুল-ফল এঁকে মা-বাবাকে দেখাতেন। ছেলেবেলা থেকেই শিল্পকলার প্রতি তার গভীর আগ্রহ ছিল। মাত্র ষোল বছর বয়সে বাড়ি থেকে পালিয়ে তিনি বন্ধুদের সাথে কলকাতায় গিয়েছিলেন শুধু গভর্নমেন্ট স্কুল অব আর্টস দেখার জন্য। কলকাতা গভর্নমেন্ট স্কুল অব আর্টস ঘুরে আসার পর সাধারণ পড়াশোনায় জয়নুল আবেদিনের মন বসছিল না। তাই ১৯৩৩ খ্রিস্টাব্দে ম্যাট্রিক পরীক্ষার আগেই স্কুলের পড়ালেখা বাদ দিয়ে কলকাতায় চলে যান এবং মায়ের অনুসমর্থনে গভর্নমেন্ট স্কুল অব আর্টস-এ ভর্তি হন। তাঁর মা জয়নুল আবেদিনের আগ্রহ দেখে নিজের গলার হার বিক্রি করে ছেলেকে কলকাতার তখনকার আর্ট স্কুলে ভর্তি হতে সাহায্য করেন। জয়নুল আবেদিন ১৯৩৩ থেকে ১৯৩৮ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত কলকাতার সরকারি আর্ট স্কুলে পড়েন। ১৯৩৮ খ্রিস্টাব্দে কলকাতার গভর্নমেন্ট স্কুল অব আর্টসের ড্রইং অ্যান্ড পেইন্টিং বিভাগ থেকে প্রথম শ্রেণিতে প্রথম হয়ে স্নাতক ডিগ্রি অর্জন করেন।

কলকাতা আর্ট কলেজে পড়াশোনা

ছবি আঁকার প্রতিভার কারণে শৈশব থেকেই এলাকার জমিদার ধীরেন্দ্রনাথ রায়ের স্নেহ লাভ করেন সুলতান। ধীরেন্দ্রনাথের ভাইয়ের ছেলে অরুণ রায় তখন কলকাতা আর্ট স্কুলের ছাত্র। সেই অরুণ রায়ের কাছে সুলতান ছবি আঁকা শিখতে শুরু করেন।

গতানুগতিক পড়াশোনার প্রতি সুলতানের আগ্রহ ছিল না কখনই। ১৯৩৮ সালে ক্লাস এইটে উঠে তিনি স্কুল ছেড়ে দেন। ছবি আঁকা শেখার জন্য কলকাতায় পাড়ি জমান। বয়স কম হবার কারণে তখন কলকাতা আর্ট স্কুলে ভর্তি হতে পারেননি। কখনো ধীরেন্দ্রনাথ রায়ের বাড়ি, কখনো তার ভাই সত্যেন রায়ের বাড়ি, কখনো তাদের অন্যান্য ভাইদের বাড়িতে থেকে সুলতান তিন বছর ছবি আঁকার চর্চা করেন।

১৯৪১ সালে তিনি কলকাতা আর্ট স্কুলে ভর্তি পরীক্ষা দেন। পরীক্ষায় অংশ নেয়া চারশো ছেলেমেয়েকে পনেরো মিনিটে ভেনাস মিলোর ছবি আঁকতে দেয়া হয়। সুলতান প্রথম হন, কিন্তু এন্ট্রান্স পাশ না থাকার কারণে তার ভর্তি নিয়ে জটিলতার সৃষ্টি হয়। তখন ধীরেন্দ্রনাথ রায় বিষয়টা অবগত করেন শাহেদ সোহরাওয়ার্দীকে। সোহরাওয়ার্দী তখন প্রখ্যাত শিল্প সমালোচক এবং কলকাতা আর্ট স্কুলের পরিচালনা পরিষদের সদস্য। তার সাহায্যে সুলতান কলকাতা আর্ট স্কুলে ভর্তি হন। তিনিই সুলতানকে পরামর্শ দেন ভর্তি হবার সময় কাগজপত্রে লাল মিয়া না লিখে শেখ মোহাম্মদ সুলতান লিখতে। সুলতানকে সোহরাওয়ার্দী সব ধরনের পৃষ্ঠপোষকতা করতে থাকেন। তার অসাধারণ সমৃদ্ধ গ্রন্থাগার সুলতানের জন্য সব সময় উন্মুক্ত ছিলো। কিছুকাল তার বাসায় ও তার ভাই শহীদ সোহরাওয়ার্দীর বাসায় থেকে সুলতান পড়াশোনা করেছেন।

কলকাতা আর্ট স্কুলের অন্যান্য ক্লাসে তখন জয়নুল আবেদিন, কামরুল হাসান, সফিউদ্দিন আহমেদ, রাজেন তরফদার, আনওয়ারুল হকের মত মানুষেরা পড়াশোনা করতেন। ফলে তাদের সাথে সুলতানের যোগাযোগ ঘটে। ছাত্র হিসেবে সুলতান ভালো ছিলেন, এর পাশাপাশি মঞ্চনাটকে অভিনয় করেও প্রশংসা অর্জন করেন।

১৯৪৩ সালে, তৃতীয় বর্ষে উঠে সুলতান আর্ট স্কুল ছেড়ে দেন।

জয়নুল আবেদিনের আগ্রহে ও পরিকল্পনায় সরকার ১৯৭৫-এ নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁয়ে লোকশিল্প জাদুঘর ও ময়মনসিংহে জয়নুল সংগ্রহশালা প্রতিষ্ঠা করে।

খুব ছোটবেলা থেকেই তিনি ছবি আঁকতে পছন্দ করতেন। পাখির বাসা, পাখি, মাছ, গরু-ছাগল, ফুল-ফল এঁকে মা-বাবাকে দেখাতেন। ছেলেবেলা থেকেই শিল্পকলার প্রতি তার গভীর আগ্রহ ছিল। মাত্র ষোল বছর বয়সে বাড়ি থেকে পালিয়ে তিনি বন্ধুদের সাথে কলকাতায় গিয়েছিলেন শুধু গভর্নমেন্ট স্কুল অব আর্টস দেখার জন্য। কলকাতা গভর্নমেন্ট স্কুল অব আর্টস ঘুরে আসার পর সাধারণ পড়াশোনায় জয়নুল আবেদিনের মন বসছিল না। তাই ১৯৩৩ খ্রিস্টাব্দে ম্যাট্রিক পরীক্ষার আগেই স্কুলের পড়ালেখা বাদ দিয়ে কলকাতায় চলে যান এবং মায়ের অনুসমর্থনে গভর্নমেন্ট স্কুল অব আর্টস-এ ভর্তি হন। তাঁর মা জয়নুল আবেদিনের আগ্রহ দেখে নিজের গলার হার বিক্রি করে ছেলেকে কলকাতার তখনকার আর্ট স্কুলে ভর্তি হতে সাহায্য করেন। জয়নুল আবেদিন ১৯৩৩ থেকে ১৯৩৮ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত কলকাতার সরকারি আর্ট স্কুলে পড়েন। ১৯৩৮ খ্রিস্টাব্দে কলকাতার গভর্নমেন্ট স্কুল অব আর্টসের ড্রইং অ্যান্ড পেইন্টিং বিভাগ থেকে প্রথম শ্রেণিতে প্রথম হয়ে স্নাতক ডিগ্রি অর্জন করেন।

১৯৪০-এর দশকে

আর্ট স্কুল ছেড়ে সুলতান দেশভ্রমণে বের হয়ে পড়েন। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের বাঁধাধরা জীবন এবং প্রাতিষ্ঠানিক চর্চার কঠোর রীতিনীতি সুলতানের জীবনের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ ছিলো না। তিনি ছিলেন বোহেমীয় জীবনাচারের অনুসারী। চেতনায় তিনি ছিলেন স্বাধীন এবং প্রকৃতিগতভাবে ছিলেন ভবঘুরে এবং ছন্নছাড়া। প্রকৃতিকে তিনি সবসময় রোমান্টিক কবির আবেগ দিয়ে ভালোবেসেছেন। আবার যান্ত্রিক নগরজীবনকে সেরকমই ঘৃণা করেছেন। ১৯৪৩ সালে তিনি খাকসার আন্দোলনে যোগ দিয়েছিলেন। এর অব্যবহিত পরেই বেরিয়ে পড়েন এবং উপমহাদেশের পথে পথে ঘুরে তার অনেকটা সময় কেটে যায়। তখন ছিলো দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময়। অনেক মার্কিন ও ব্রিটিশ সৈন্য ছিলো ভারতে। তিনি ছোট-বড় বিভিন্ন শহরে ঘুরে ঘুরে ছবি এঁকে তা সৈন্যদের কাছে বিক্রি করতেন। এভাবেই তিনি সেসময় জীবনধারণ করেছেন। মাঝে মাঝে তার ছবির প্রদর্শনীও হয়েছে। এর মাধ্যমে তিনি শিল্পী হিসেবে কিছুটা পরিচিতি লাভ করেন। কিন্তু সুলতানের চরিত্রে পার্থিব বিষয়ের প্রতি যে অনীহা এবং যে খামখেয়ালীপনা ছিলো তার কারণে সেই ছবিগুলো রক্ষা করা সম্ভব হয়নি। সেগুলোর কোনো আলোকচিত্রও এখন পাওয়া যায় না। এছাড়া তিনি কখনও এক স্থানে বেশি দিন থাকতেন না। তিনি বলেন

তবে এটুকু জানা গেছে যে, সেসময় তিনি প্রাকৃতিক নৈসর্গ্য এবং প্রতিকৃতি আঁকতেন। তার আঁকা ছবির প্রথম প্রদর্শনী হয়েছিলো ১৯৪৬ সালে সিমলায়।

১৯৪৭ সালে ব্রিটিশ উপনিবেশ বিভক্ত হয়ে পাকিস্তান ও ভারতের জন্ম হয়। এই বিভক্তির পর এস এম সুলতান কিছু দিনের জন্য নিজ দেশ তথা তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানে ফিরে আসেন। এখানে কিছুদিন থেকেই করাচি চলে যান। সেখানে পারসি স্কুলের শিল্প শিক্ষক হিসেবে দুই বছর চাকুরি করেছিলেন। সেখানে চাকুরিরত থাকা অবস্থায় তার সাথে পরিচয় হয় চুঘতাই এবং শাকের আলীর মত বিখ্যাত শিল্পীদের। এর কিছু আগে ১৯৫০ সালে চিত্রশিল্পীদের এক আন্তর্জাতিক সম্মেলনে যোগ দেয়ার উদ্দেশ্যে তিনি যুক্তরাষ্ট্রে যান। সেখানে নিউ ইয়র্ক, ওয়াশিংটন, শিকাগো এবং বোস্টনে তার ছবির প্রদর্শনী হয়। এরপর লন্ডনেও তিনি প্রদর্শনী করেছিলেন। ১৯৫৩ সালের অক্টোবরে তিনি আবার নড়াইলে ফিরে আসেন। তার কিছুদিন পর তিনি চলে আসেন চাচুঁড়ি পুরুলিয়া তে। এখানকার পরিত্যক্ত কৈলাসটিলা জমিদারবাড়িটি পরিষ্কার করে সেখানে প্রতিষ্ঠা করেন নন্দনকানন প্রাইমারি স্কুল এবং নন্দনকানন ফাইন আর্টস স্কুল যা পরে পরিণত হয় চাচুঁড়ি পুরুলিয়া হাইস্কুল-এ। প্রশাসনের সহায়তায় স্কুল চলতে থাকে কিন্তু বন্ধ হয়ে যায় ছবি আঁকার ক্লাস। সুলতান দুঃখ পেয়ে আবার নড়াইলে চলে আসেন। এবার এসে তিনি শিশুশিক্ষার প্রসারে কাজ শুরু করেন যা নিয়ে তার অনেক স্বপ্ন ছিলো। শেষ বয়সে তিনি নড়াইলে শিশুস্বর্গ এবং যশোরে চারুপীঠ নামে দুটি শিশু শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলেছিলেন।

অনেকটা সময় তার নড়াইলেই কেটে যায়। ঢাকায় আধুনিক চিত্রশিল্পের বিকাশের সময়টায় তিনি প্রায় সকলের অজ্ঞাতেই ছিলেন। সত্তরের দশকের শুরুর দিকে তিনি নড়াইল জেলার পুরুলিয়া গ্রামে থাকতেন। ১৯৭৬ সালের আগ অবধি পুরুলিয়া গ্রামে তার যাওয়া-আসা ছিলো। ১৯৭৬ সাল পর্যন্ত তিনি শিল্পরসিকদের চোখের আড়ালেই থেকে যান। সত্তরের দশকের মধ্যভাগে তার কিছু শুভানুধ্যায়ী তাকে ঢাকায় নিয়ে আসেন। এখানে এসে তিনি কিছু ছবি আঁকেন। তার আঁকা এইসব ছবি নিয়ে ১৯৭৬ সালে বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমী এক প্রদর্শনীর আয়োজন করে, এবং এই প্রদর্শনীর মাধ্যমেই তিনি নতুন করে শিল্পসমাজে প্রতিষ্ঠা লাভ করেন। অবশ্য আশির দশক থেকে তিনি আবার নড়াইলেই থাকতে বাধ্য হন। তার কাছে যেসব মানুষ এবং শিশু আশ্রয় নিয়েছিলো তাদের জন্য তিনি নিজের ঘর ছেড়ে দেন। জীবজন্তুর প্রতি ভালোবাসা থেকে তিনি একটি চিড়িয়াখানা তৈরি করেন এবং সম্পূর্ণ নিজস্ব অর্থায়নে শিশুদের জন্য সুন্দরী কাঠ দিয়ে একটি বড় আকারের নৌকাও তৈরি করেছিলেন। তার ইচ্ছা ছিলো শিশুরা সেই নৌকায় চড়ে সমুদ্র পরিভ্রমণে বের হবে আর শিল্পচর্চার উপকরণ খুঁজে পাবে।আশির দশকের শেষদিকে তার স্বাস্থ্য খারাপ হতে থাকে। ১৯৯৪ সালে ঢাকার গ্যালারি টোনে তার সর্বশেষ প্রদর্শনী অনুষ্ঠিত হয়। সে বছরেরই আগস্ট মাসে নড়াইলে ঘটা করে তার জন্মদিন পালন করা হয়।

জয়নুল আবেদিনের আগ্রহে ও পরিকল্পনায় সরকার ১৯৭৫-এ নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁয়ে লোকশিল্প জাদুঘর ও ময়মনসিংহে জয়নুল সংগ্রহশালা প্রতিষ্ঠা করে।

খুব ছোটবেলা থেকেই তিনি ছবি আঁকতে পছন্দ করতেন। পাখির বাসা, পাখি, মাছ, গরু-ছাগল, ফুল-ফল এঁকে মা-বাবাকে দেখাতেন। ছেলেবেলা থেকেই শিল্পকলার প্রতি তার গভীর আগ্রহ ছিল। মাত্র ষোল বছর বয়সে বাড়ি থেকে পালিয়ে তিনি বন্ধুদের সাথে কলকাতায় গিয়েছিলেন শুধু গভর্নমেন্ট স্কুল অব আর্টস দেখার জন্য। কলকাতা গভর্নমেন্ট স্কুল অব আর্টস ঘুরে আসার পর সাধারণ পড়াশোনায় জয়নুল আবেদিনের মন বসছিল না। তাই ১৯৩৩ খ্রিস্টাব্দে ম্যাট্রিক পরীক্ষার আগেই স্কুলের পড়ালেখা বাদ দিয়ে কলকাতায় চলে যান এবং মায়ের অনুসমর্থনে গভর্নমেন্ট স্কুল অব আর্টস-এ ভর্তি হন। তাঁর মা জয়নুল আবেদিনের আগ্রহ দেখে নিজের গলার হার বিক্রি করে ছেলেকে কলকাতার তখনকার আর্ট স্কুলে ভর্তি হতে সাহায্য করেন। জয়নুল আবেদিন ১৯৩৩ থেকে ১৯৩৮ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত কলকাতার সরকারি আর্ট স্কুলে পড়েন। ১৯৩৮ খ্রিস্টাব্দে কলকাতার গভর্নমেন্ট স্কুল অব আর্টসের ড্রইং অ্যান্ড পেইন্টিং বিভাগ থেকে প্রথম শ্রেণিতে প্রথম হয়ে স্নাতক ডিগ্রি অর্জন করেন।

শিল্পকর্ম

পঞ্চাশের দশকের মধ্যভাগে বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকায় আধুনিক চিত্রকলার ক্ষেত্রে অনেক গুরুত্বপূর্ণ কাজ হচ্ছিলো। অনেক শিল্পীই সেখানে নব নব শৈলী, গড়ন এবং মিডিয়া নিয়ে উপস্থিত হচ্ছিলেন। কিন্তু এস এম সুলতান সেসময়ও নড়াইলে থেকে যান, অনেকটা লোকচক্ষুর অন্তরালে। এর কারণ অবশ্য গ্রামীণ জীবনের প্রতি তার চিরন্তন আকর্ষণ এবং সহমর্মিতা। তার শিল্পকর্মের স্বরূপটিও খুঁজে পাওয়া যায় এই গ্রামীণ জীবনযাত্রার প্রেক্ষাপটে। তার সে সময়কার ছবিগুলোতে গ্রামীণ কৃষকদের দেখা যায় পেশীবহুল এবং বলশালী হিসেবে। এর কারণ হিসেবে তার বক্তব্য হলো:

তার ছবিতে গ্রামীণ রমণীদের দেখা যায় সুডৌল ও সুঠাম গড়নে। নারীর মধ্যে উপস্থিত চিরাচরিত রূপলাবণ্যের সাথে তিনি শক্তির সম্মিলন ঘটিয়েছিলেন। একই সাথে তার এ ছবিগুলোতে গ্রামীণ প্রেক্ষাপটের শ্রেণী-দ্বন্দ্ব এবং গ্রামীণ অর্থনীতির কিছু ক্রূর বাস্তবতা উঠে এসেছে। তার এরকম দুটি বিখ্যাত ছবি হচ্ছে হত্যাযজ্ঞ (১৯৮৭) এবং চরদখল (১৯৮৮)।

১৯৭৬ সালে তার আঁকা শিল্পকর্ম নিয়ে শিল্পকলা একাডেমীর প্রদর্শনীতে তার ছবির মহিমা নতুন করে প্রস্ফুটিত হয়। এই ছবিগুলোর মধ্যে দেখা যায় বিশ্বের কেন্দ্র হচ্ছে গ্রাম আর সেই কেন্দ্রের রূপকার কৃষককে আপন মহিমায় সেখানে অধিষ্ঠিত দেখা যায়। গ্রাম ও গ্রামের মানুষ ছিলো তার শিল্পকর্মের অনুপ্রেরণা আর উপকরণ ছিলো কৃষক এবং কৃষকের জীবন চেতনা। এস এম সুলতান তেলরঙ এবং জলরঙ-এ ছবি আঁকতেন৷ পাশাপাশি রেখাচিত্র আঁকতেন । আঁকার জন্য তিনি একেবারে সাধারণ কাগজ, রঙ এবং জটের ক্যানভাস ব্যবহার করেছেন। এজন্য তার অনেক ছবিরই রঙ নষ্ট হয়ে যাচ্ছিলো, যদিও এসবের প্রতি তিনি তেমন ভ্রূক্ষেপ করতেন না। নড়াইলে থাকাকালীন সময়ে তিনি অনেক ছবি কয়লা দিয়ে একেছিলেন তবে সঠিকভাবে সংরক্ষণের অভাবে সেগুলো নষ্ট হয়ে যায়৷

এস এম সুলতান আধুনিকতার একটি নিজস্ব সংজ্ঞা গ্রহণ করেছিলেন। তার তেমন কোনো অনুসারী ছিলোনা যারা একই সংজ্ঞা মেনে শিল্পচর্চা করতেন। একারণেই তার প্রতিষ্ঠিত আধুনিকতার স্বরূপ নিয়ে নতুন কোনো ধারার সৃষ্টি হয়নি। কেউ তার মতো করে আধুনিকতার ব্যাখ্যাও দেননি। এছাড়া তার মতো মাটির জীবন তখনকার কোনো শিল্পী যাপন করেননি। তার কাছে আধুনিকতার সংজ্ঞা কেমন ছিলো তা বলতে গিয়ে বাংলাপিডিয়ায় তার জীবনীর লেখক সৈয়দ মনজুরুল ইসলাম লিখেছেন: তাঁর কাছে অবয়বধর্মিতাই প্রধান। তিনি আধুনিক, বিমূর্ত শিল্পের চর্চা করেননি; তাঁর আধুনিকতা ছিলো জীবনের শাশ্বত বোধ ও শিকড়ের প্রতিষ্ঠা করা। তিনি ফর্মের নিরীক্ষাকে গুরুত্ব দেননি, দিয়েছেন মানুষের ভেতরের শক্তির উত্থানকে, ঔপনিবেশিক শক্তির বিরুদ্ধে লড়াই এবং ঔপনিবেশিক সংগ্রামের নানা প্রকাশকে তিনি সময়ের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে উপস্থাপন করেছেন। এটাই তাঁর কাছে ছিলো ‘আধুনিকতা’, অর্থাৎ তিনি ইউরো-কেন্দ্রিক, নগর নির্ভর, যান্ত্রিকতা-আবদ্ধ আধুনিকতার পরিবর্তে অন্বেষণ করেছেন অনেকটা ইউরোপের রেনেসাঁর শিল্পীদের মতো মানবের কর্মবিশ্বকে।

শিল্পী এস এম সুলতান শেষ জীবনে বলে গিয়েছেন:

ইন্টারন্যাশনাল অ্যাস্ট্রোনমিক্যাল ইউনিয়ন কর্তৃক ৯ জুলাই, ২০০৯ বুধ গ্রহের একটি জ্বালামুখ তার মানবসভ্যতায় মানবিক মূল্যবোধ ও উপলদ্ধিকে গভীরতর করার প্রেক্ষিতে আবেদিন জ্বালামুখ নামে নামকরণ করা হয়। তার জন্মদিন উপলক্ষে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে উৎসব হয় ও শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদিন সংগ্রহশালায় (আর্ট গ্যালারি) শিশুদের চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতার আয়োজন করা হয়।

বিশ্বের প্রাচীনতম ও সর্ববৃহৎ ব্রিটিশ নিলামকারী প্রতিষ্ঠান বনহামসে তার স্কেচ বিক্রয় হয়। তিনি ১৯৫৮ সালে তৎকালীন পাকিস্তান সরকারের সবচেয়ে বড় খেতাব হেলাল-ই-ইমতিয়াজ,১৯৬৮ সালে ঢাকা আর্ট কলেজের ছাত্রদের তরফ থেকে ‘শিল্পার্চায’ উপাধি এবং ১৯৭৪ সালে বাংলাদেশ সরকারের তরফ থেকে জাতীয় অধ্যাপক (বাংলাদেশ) সম্মান লাভ করেন।

তার ১০৫ তম জন্মদিনে গুগল ডুডল ফিচার করে সম্মননা করে।

পুরস্কার

তিনি ১৯৮০-এর দশকে যুক্তরাষ্ট্রের তৎকালীন প্রেসিডেন্ট রোনাল্ড রিগ্যানের কাছ থেকে শ্রেষ্ঠত্বের পুরস্কার গ্রহণ করেন। তিনি ১৯৫১ সালে নিউ ইয়র্কে, ইনস্টিটিউট অব ইন্টারন্যাশনাল এডুকেশন কর্তৃক আয়োজিত সেমিনারে সরকারি প্রতিনিধি হিসেবে অংশগ্রহণ করেন৷ এছাড়াও ১৯৮১ খ্রিষ্টাব্দে ঢাকায় অনুষ্ঠিত এশীয় চারুকলা প্রদর্শনীতে আন্তর্জাতিক জুরী কমিটির অন্যতম সদস্য মনোনীত হন৷

মৃত্যু

এস এম সুলতান ১৯৯৪ সালের ১০ অক্টোবর যশোরে সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে বিকেল ৪টা ৩৫ মিনিটে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন।